নামাযের ফরজ সমূহের দালিলিক আলোচনা

নামাযের ফরজ সমূহের দালিলিক আলোচনা


নামাযের ৪নং ফরয হচ্ছে সতর ঢাকাঃ

অর্থাৎ লজ্জাস্হান ঢেকে নামায আদায় করতে হবে। পুরুষের জন্য নামাযের সতর হচ্ছে, পেট, পিঠ ঢেকে নাভী থেকে নিয়ে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। এই পরিমাণ স্হান ঢাকা থাকলেই তার নামায আদায় হয়ে যাবে। আর মহিলাদের জন্য ফরয হচ্ছে, চুলের গোড়া থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয। কিন্তু নামাযের সময় মুখমন্ডল, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা খোলা থাকলেও নামায আদায় হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে পোশাক সম্পর্কে বলেছেন,

হে বনী আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।

{সূরা আরাফ, আয়াতঃ ২৬}

হে বনী আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও। আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ‌ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

{সূরা আরাফ, আয়াতঃ ৩১}

উক্ত আয়াতে কারীমা থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক পুরুষ এবং নারীর জন্য তার সতর ঢেকে রাখা ফরয চাই নামাযের ভিতর হোক বা বাইরে হোক।


নামাযে পুরুষের সতরঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দাঁড়িয়ে এক কাপড়ে সালাত আদায়ের হুকুম জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের নিকট কি দু’খানা করে কাপড় আছে? অতঃপর এক ব্যক্তি ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যখন তোমাদের সামর্থ্য দিয়েছেন তখন তোমরাও নিজেদের সামর্থ্য প্রকাশ কর। লোকেরা যেন পুরো পোশাক একত্রে পরিধান করে অর্থাৎ মানুষ লুঙ্গি ও চাদর, লুঙ্গি ও জামা, লুঙ্গি ও কাবা, পায়জামা ও চাদর, পায়জামা ও জামা, পায়জামা ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও জামা পরে সালাত আদায় করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমার মনে হয় ‘উমর (রাঃ) জাঙ্গিয়া ও চাদরের কথাও বলেছিলেন।

{বুখারী শরীফ, হাঃ ৩৬৫}

সা’ঈদ ইব্‌নু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-কে একটি কাপড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন দরকারে তাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাতে রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কী? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরূপ জড়ানো অবস্থায় তোমাকে দেখলাম? আমি বললামঃ কাপড় একটিই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করবে।

{বুখারী শরীফ, হাঃ ৩৬১}

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ইবনে আবু তালিব রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন, নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গগুলো হচ্ছে সতর।

{মুস্তাদরাকে হাকেম}

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, কোন পুরুষ কোন পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না, কোন মহিলা মহিলার সতরের দিকে তাকাবে না।

{তিরমিযী শরীফ, ২/১০৭ পৃঃ}

নারীর সতরঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘ওড়না’ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের সলাত কবূল হয় না।

{আবূ দাঊদ, ৬৪১, তিরমিযী, ৩৭৭}

উম্মু সালামাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে নাবী! আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং অন্যান্য মু’মিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়...”(সূরাহ আল-আহযাবঃ ৫৯)। তখন থেকে আনাসার মহিলারা তাদের মাথায় এমন চাদর জড়িয়ে বের হতেন, (চাদর কালো বর্ণের হওয়ায়) মনে হতো তাতে যেন কাক বসে আছে।

{আবু দাউদ শরীফ, হাঃ ৪১০১}

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ প্রথম সারির মুহাজীর নারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। কেননা আল্লাহ যখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তারা যেন তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ মাথার ওড়না দ্বারা আবৃত করে নেয়”- তখন তারা তাদের সেলাইবিহীন কাপড় ছিঁড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়ে নেন।

{আবু দাউদ শরীফ, হাঃ ৪১০২}

সাফিয়্যাহ বিনতু আবু ‘উবাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করলেন, যখন তিনি পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! নারীদের ইযার ব্যবহারের বিধান কি? তিনি বললেনঃ তারা এক বিঘত নীচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখতে পারে। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, এতেও তার কিছু অংশ খোলা থাকবে। তিনি বললেনঃ তবে এক হাত ঝুলিয়ে পরবে; এর বেশি নয়।

{আবু দাউদ শরীফ, হাঃ ৪১১৭}

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।

{তিরমিযী শরীফ, হাঃ ১১৭৩}

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়।

{মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ ৮৮৫৯}

নামাযের ফরজ সমূহের দালিলিক আলোচনা পর্বঃ ০১

নামাযের ফরজ সমূহের দালিলিক আলোচনা পর্বঃ ০২

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
No Comment
Add Comment
comment url