নামাযের ফরজ সমূহের দালিলিক আলোচনা
নামাযের ফরজ মোট ১৩টি।
নামাযের বাইরে ফরজ ৭টি এবং নামাযের ভিতরে ৬টি।
নামাযের বাইরের ফরজগুলো হচ্ছে,
নামাযের বাইরের ফরজগুলো হচ্ছে,
১। শরীর পাক ২। কাপড় পাক ৩। জায়গা পাক ৪। সতর ঢাকা ৫। ওয়াক্ত চিনে নামায পড়া ৬। নিয়ত করা ৭। কেবলা মুখি হয়ে নামায পড়া।
নামাযের ভিতরের কাজগুলো হচ্ছে,
১। দাঁড়িয়ে নামায পড়া ২। তাকবীরে তাহরীমা বলা ৩। কেরাত পড়া ৪। রুকু করা ৫। দুই সেজদাহ করা ৬। শেষ বৈঠক করা
কুরআন হাদীস থেকে আমরা এখন উক্ত ফরজ সমূহের বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
নামাযের ১ নাম্বার ফরয হচ্ছে শরীর পাক পবিত্র হতে হবেঃ
শরীর পাক দুভাবে হয়। এক. গোসল করা দুই. ওযু করা।
এক.
যদি কারো উপর গোসল ফরয হয়ে যায় তবে সে গোসল করে পবিত্র হবে। এসম্পর্কে দলীল নিম্নে দেয়া হলো সংক্ষিপ্তভাবে।
বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনঃ
আর এটা সম্পন্ন হয় গোসলের মাধ্যমে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
(وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ )
[আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে পবিত্রতা অর্জন করো।]
[ সূরা আল মায়িদা:৬]
আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত শুরু করে (হঠাৎ তা ছেড়ে দিলেন) আর লোকদেরকে হাতে ইশারা করলেন যে, তোমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। কিছুক্ষণ পর (ফারয গোসল করে) তিনি ফিরে এলেন। তখন তাঁর মাথা থেকে পানি ঝরে পড়ছিল। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করালেন।
[ বুখারী ও মুসলিম।]
.
উক্ত হাদীস হতে জানা যায় যে, গোসল ফরয অবস্হায় নামায পড়া নিষেধ।
দুই.
ওযু করা। নামায শুরু করার আগে ওযু করে নেয়া ফরয। এসম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে দলীল পেশ করা হল।
.
আবূ হুরায়রাহ রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ এরশাদ করেছেন,
ওযুবিহীন অবস্হায় তোমাদের কারো নামায কবুল করা হবে না, যতক্ষণ না সে ওযু করে (পুনরায় সালাত আদায় না করে)।
[বুখারী ১৩৫, মুসলিম, ২২৫]
নামাযের ২ নং ফরজ হচ্ছে কাপড় পবিত্র হতে হবেঃ
নামাযের জন্য যেমন শরীর পাক পবিত্র হতে হবে তেমনি যে পোশাক পরে নামায আদায় করবেন সেই পোশাকও হতে হবে পাক পবিত্র। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
হে বনী আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও। আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
[সূরা আরাফ, আয়াতঃ ৩১]
প্রস্রাবের ছিটা থেকে শরীর এবং কাপড় বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কেননা প্রস্রাবের ছিটা অপবিত্র। আর এই অপবিত্র জিনিস যদি কাপড়ে লাগে তাহলে সেই কাপড় নাপাক হবে এবং তা দ্বারা নামায আদায় করা যাবে না।
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে নরম জায়গায় প্রস্রাব করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব করতে ইচ্ছা করলে এরূপ নরম স্থান খোঁজ করবে (যাতে শরীরে প্রস্রাবের ছিটা না আসে)।
[আবু দাউদ শরীফ, ৩]
আবদুর রহমান ইবনু হাসানাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর থেকে বের হয়ে) আমাদের কাছে এলেন, আর তাঁর হাতে ছিল একটি চামড়ার ঢাল (বর্ম)। তিনি ঢালটি (পর্দাস্বরূপ স্থাপন করে) তার দিকে ফিরে মাটিতে বসে প্রস্রাব করলেন। তখন (মুশরিকদের) কয়েকজন বলে উঠল, দেখ, মেয়েদের মতো (পর্দা করে) প্রস্রাব করছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা শুনলেন এবং বললেন, তোমার জন্য আফসোস হয়, তুমি কি জানো না যে, বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কি ঘটেছিল? অর্থাৎ তাদের শরীরে (বা কাপড়ে) যখন প্রস্রাব লাগতো, তখন তারা কাঁচি দিয়ে তা কেটে ফেলতো। তাই সে (বানী ইসরাঈল-এর এক ব্যক্তি) তা হতে মানুষকে নিষেধ করল। ফলে (মৃত্যুর পর) তাকে ক্ববরের ‘আযাব দেয়া হল।
[ইবনু মাজাহ্ ৩৪৬, আবূ দাঊদ, সহীহুত্ তারগীব ১৬২]
আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন জনৈক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কারও যদি কাপড়ে হায়যের রক্ত লাগে, তখন সে কি করবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কারো কাপড়ে হায়যের রক্ত লেগে গেলে, সে আঙ্গুল দিয়ে তা খুঁটে ফেলবে। অতঃপর পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। তারপর তাতে সলাত আদায় করবে।
[বুখারী ৩০৭, মুসলিম ২৯১, আবূ দাঊদ ৩৬১, মালিক ৪৯/১৯৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৫০]
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে কাপড়ে লেগে থাকা মানী (বীর্য) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি [আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় থেকে মানী ধুয়ে দিতাম। তারপর তিনি সলাত আদায়ের উদ্দেশে বের হতেন, অথচ তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) কাপড়ে বীর্যের ‘আলামাত দেখা যেত।
[বুখারী ২৩০, মুসলিম ২৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪১৮০]
উম্মু ক্বায়স বিনতু মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদিন তিনি তার একটি শিশু নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন। (পুত্র শিশুটি মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য গ্রহণে অনুপযুক্ত ছিল)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আপন কোলে বসালেন। শিশুটি তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে প্রস্রাব করে দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনালেন, প্রস্রাবের উপর পানি ঢেলে দিলেন, ধুলেন না।
[বুখারী ২২৩, মুসলিম ২৮৭, আবূ দাঊদ ৩৭৪, নাসায়ী ৩০২, ইবনু মাজাহ্ ৫২৪, ইরওয়া ১৬৯]
লুবাবাহ্ বিনতু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুসায়ন ইবনু ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে তাঁর কাপড়ে প্রস্রাব করে দিলেন। তখন আমি বললাম, আপনি অন্য কাপড় পরে নিন এবং আমাকে আপনার কাপড়টি দিন, আমি তা ধুয়ে দেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তরে বললেন, মেয়েদের প্রস্রাব ধুতে হয়। ছেলেদের প্রস্রাবের উপর পানি ছিটিয়ে দিলেই হয়।
[আবূ দাঊদ ৩৭৫, ইবনু মাজাহ্ ৫২২, আহমাদ ৬/৩৩৯, হাকিম ১/১৬৬।]
ভাই খুব সুন্দর বিষয়ভিত্তিক ব্যাখ্যা। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করেন। আমিন।
ছূম্মা আমীন, জাযাকাল্লাহু খাইর ❤️