ফাজায়েল ও মাসায়েলে কুরবানী পর্বঃ ০১
কুরবানী কাকে বলে?
কুরবানী শব্দের অর্থ হচ্ছে, নৈকট্য অর্জন করা, সন্তুষ্টি লাভ করা, উৎসর্গ করা, ত্যাগ করা।ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবেহ করাকে কুরবানী বলে।
{মাজমাউল আনহুর, ২/৫১৬ পৃঃ}
কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
বলো, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী।
{সূরা আনআম, আয়াতঃ ১৬২, ১৬৩}
অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী করো।
{সূরা কাউসার, আয়াতঃ ২}
তোমার কাছে আসবে, যাতে এখানে তাদের জন্য যে কল্যাণ রাখা হয়েছে তা তারা দেখতে পায় এবং তিনি তাদেরকে যেসব পশু দান করেছেন তার উপর কয়েকটি নির্ধারিত দিনে আল্লাহর নাম নেয় নিজেরাও খাও এবং দুর্দশাগ্রস্ত অভাবীকেও খাওয়াও।
{সূরা হাজ্জ, আয়াতঃ ২৮}
প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা সে পশুদের ওপর আল্লাহর নাম নেয় যেগুলো তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। (এ বিভিন্ন নিয়মের উদ্দেশ্য একই) কাজেই তোমাদের ইলাহও সে একজনই এবং তোমরা তাঁরই ফরমানের অনুগত হয়ে যাও। আর হে নবী! সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বনকারীদেরকে,
{সূরা হাজ্জ, আয়াতঃ ৩৪}
একটি বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম।
{সূরা আস সাফ্ফাত, আয়াতঃ ১০৭}
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?
নিজে এবং তার পরিবার মিলে খেয়ে পরে কুরবানীর দিনগুলোতে যদি তার কাছে কুরবানীর পশু ক্রয় করার মত অর্থ থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যদি কুরবানী না করে তাহলে হাদীসে তার প্রতি কড়া ধমক এসেছে,আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।
{ইবনে মাজাহঃ ৩১২৩}
প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ হতে প্রতি বছর একটি কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
{মুসনাদে আহমাদ, ২০২০৭}
কুরবানীর ফজিলতঃ
আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরবানীর দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা (কুরবানী করা)। কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও ক্ষুরসহ হাযির হবে। তার (কুরবানীর পশুর) রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকটে এক বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানী কর।
{তিরমিযী শরীফ, ১৪৯৩}
যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
{ইবনে মাজাহ শরীফ, ৩১২৭}
যে ব্যক্তি কুরবানী দিতে ইচ্ছে করবে সে জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলে ১০ই জিলহজ্জ পর্যন্ত তার চুল এবং হাত পায়ের নখ কাটবে না। জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পূর্বেই পরিস্কার হয়ে নিবে। হাদীসে এসেছে,
সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব সূত্রে উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন যিলহজ্জ মাসের দশদিন আরম্ভ হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন তার চুল ও নখ থেকে কিছুই না কাটে।
{নাসাঈ শরীফ, ৪৩৬৪}