মাওলানা মওদুদী রঃ এর প্রতি অভিযোগের জবাব
ইছমতে আম্বিয়াঃ
আপনাদের হুজুরেরা তো "গোনাহ" কথা উল্লেখ করেছেন আর মাওঃ মওদুদী রঃ শুধু ভুল ত্রুটির কথা বলেছেন। তাও সেটা অন্যায়!!
এবার তাফহীমুল কুরআনের পুরা ব্যাখ্যাটি দেখুনঃ
অর্থাৎ তোমার রবের কাছে দোয়া করো। তিনি তোমাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করতে গিয়ে তোমার যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা যেন তিনি মাফ করে দেন। ইসলাম বান্দাকে এ আদব ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে। কোন মানুষের দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের যতবড় খিদমতই সম্পন্ন হোক না কেন, তাঁর পথে সে যতই ত্যাগ স্বীকার করুক না এবং তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী করার ব্যাপারে যতই প্রচেষ্টা ও সাধনা চালাক না কেন, তার মনে কখনো এ ধরনের চিন্তার উদয় হওয়া উচিত নয় যে, তার ওপর তার রবের যে হক ছিল তা সে পুরোপুরি আদায় করে দিয়েছে। বরং সব সময় তার মনে করা উচিত যে, তার হক আদায় করার ব্যাপারে যেসব দোষ-ত্রুটি সে করেছে তা মাফ করে দিয়ে যেন তিনি তার এ নগণ্য খেদমত কবুল করে নেন। এ আদব ও শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। অথচ তাঁর চেয়ে বেশী আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনাকারী আর কোন মানুষের কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। তাহলে এক্ষেত্রে অন্য কোন মানুষের পক্ষে তার নিজের আমলকে বড় মনে করার অবকাশ কোথায়? আল্লাহর যে অধিকার তার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা সে আদায় করে দিয়েছে এ অহংকার মত্ত হওয়ার কোন সুযোগই কি তার থাকে? কোন সৃষ্টি আল্লাহর হক আদায় করতে সক্ষম হবে, এ ক্ষমতাই তার নেই।
মহান আল্লাহর এ ফরমান মুসলমানদের এ শিক্ষা দিয়ে আসছে যে, নিজের কোন ইবাদাত, আধ্যাত্মিক সাধনা ও দ্বীনি খেদমতকে বড় জিনিস মনে না করে নিজের সমগ্র প্রাণশক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত ও ব্যয় করার পরও আল্লাহর হক আদায় হয়নি বলে মনে করা উচিত। এভাবে যখনই তারা কোন বিজয় লাভে সমর্থ হবে তখনই এ বিজয়কে নিজেদের কোন কৃতিত্বের নয় বরং মহান আল্লাহর অনুগ্রহের ফল মনে করবে। এজন্য গর্ব ও অহংকারে মত্ত না হয়ে নিজেদের রবের সামনে দ্বীনতার সাথে মাথা নত করে হামদ, সানা ও তাসবীহ পড়তে এবং তাওবা ও ইসতিগফার করতে থাকবে।
================
কওমীর ভাইয়েরা আপনারা যে কিভাবে লেখা পড়া করেন আর কিযে শিখেন তা আল্লাহই ভাল জানেন। আপনারা মওদুদীর ভুল ধরতে গিয়ে এমন অন্ধ হয়ে গেছেন যে, নিজেদের ভুল ধরার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলেছেন! যাই হোক আপনাদেরকে যে তাফসীরে জালালাইন শরীফ পড়ানো হয় সেই তাফসীরের ৩০ পারার সূরা নাসরের তাফসীরটা এই মুহূর্তে একবার দেখে নিন, সেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে গোনাহসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। সেখানে নবীর সাঃ শানে গোনাহ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মওদুদী রঃ একবারও গোনাহ শব্দ ব্যবহার করেননি বরং ভুল ত্রুটি ব্যবহার করেছেন। আর সেজন্য আপনারা তাকে গোমরা, কাফের, কত কি উপাধী দিয়েছেন! এখন আপনাদের উলামাদের সম্পর্কে কি ফতোয়া দিবেন আমরা একটু দেখতে চাই।
নিচে স্ক্রিনশট দেয়া হলো। যাচাই করুন।
সত্যকে আর কত অস্বীকার করবেন আপনারা!! তাফসীরে জালালাইন থেকে প্রমাণ দেখানো হলো তখন আবার বলছেন যে, এটা অনুবাদকের ব্যাখ্যা! আসলে সত্যকে যারা মেনে নিতে চায়না তাদের কুযুক্তির কোন অভাব হয় না!!
তাহলে দেখুনঃ
এই অনুবাদক সাহেবও আপনাদের কওমী দেওবন্দের প্রডাক্ট!
প্রকাশক সাহেবও কওমী দেওবন্দের প্রডাক্ট, প্রকাশণীও কওমী প্রডাক্ট, ছাপাখানাও কওমী প্রডাক্ট, দেশের সমস্ত কওমী মাদ্রাসায় এই তাফসীর পড়ানো হয়, যারা পড়ায় তারাও কওমীর প্রডাক্ট, যারা পড়ে তারাও কওমীর প্রডাক্ট।
অতএব, এ আকীদা শুধু অনুবাকের নয়, এ আকীদা গোটা কওমী দেওবন্দীদের এ কথা অস্বীকার করার আর কোন উপায় নেই। এটা কেবল একটি প্রমাণ দেখানো হলো এরকম আরো অনেক প্রমাণ আছে!! স্ক্রিনশট দেয়া হলোঃ
================
আরো দেখুনঃ
আল্লামা মওদুদীর বক্তব্যঃ "এটি একটি সূক্ষ্ন রহস্য যে মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তাঁর হেফাজত উঠিয়ে নিয়ে দু'একটি ভুল ত্রুটি হতে দিয়েছেন যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে ।" (তাফহীমাত ২/৪৩)
মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর বক্তব্যঃ "কোন কোন সময় নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনাসমূহ কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হেকমত ও রহমত। এর মধ্য এক বড় ফায়দা এও যে মানুষের মনে যেন নবীদের খোদা হওয়ার সন্দেহ না হয়।"
(মাজালিসে হাকীমুল উম্মাতঃ মুফতী শফী, ৬৫ পৃষ্ঠা)
প্রিয় পাঠক! আল্লামা মওদুদী আর মাওলানা থানবীর বক্তব্যের মাঝে কি অমিল পাওয়া গেছে? না। তবুও এই কারণে আল্লামা মওদুদী কাফের। কিন্তু মাওলানা থানবী কাফের নন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সুলাইমান নদভীর বক্তব্যঃ "মানুষ হিসেবে তাদের থেকেও ভুল ত্রুটি হতে পারে । কিন্তু আল্লাহ তাঁর ওহীর দ্বারা এসমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন ।" (সিরাতুন্নবী ৪/৭০)
আল্লামা নদভীকে কিন্তু এই কথা বলার কারণে কেউ কাফের বা ভ্রান্ত বলেনা। কিন্তু মওদুদী বললেই...
ফারায়েয শাস্ত্রের ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর বক্তব্যঃ "আম্বিয়া কিরাম নবুওত প্রাপ্তির পর থেকে ইচ্ছাকৃত কবীরা ও সগীরা গুনাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা ও সগীরা গুনাহ হতে পারে।" (ইছমতে আম্বিয়া, ২৮ পৃষ্ঠা)
"আদম (আঃ) অবাধ্য ছিলেন। আর অবাধ্য হওয়াকে আমরা কবীরা গুনাহ মনে করি।" (ইছমতে আম্বিয়া, ৩৬ পৃষ্ঠা)
এই কথাটি মওদুদী বললে কেমন হত?
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাঃ "ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যপারে অধিকাংশ আলেমদের মত হলো তা জায়েয ও সম্ভব। এমনকি জমহুর উলামার মতে নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ ইচ্ছাকৃতও হতে পারে।"
(কওমী ও আলীয়া মাদ্রাসায় পাঠ্য আকীদার কিতাব শরহে আকাঈদে নসফীঃ ইছমতে আম্বিয়া)
ধৈর্যশীল পাঠক! চিন্তা করুন, মওদূদী বলেছেন ভুল হতে পারে। তাতেই তাঁকে ভ্রান্ত, কাফির ইত্যাদি বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একশ্রেণীর কাওমী মূর্খ ও মিথ্যাবাদী আলেম অপবাদ দেয় তিনি নাকি নবীদেরকে নিস্পাপ মনে করেন নি!
তাদের দলিলঃ উপরোল্লেখিত মওদূদীর বক্তব্য। অথচ যেসকল ইমামরা গুনাহ হতে পারে বলেছেন তাদেরকে কিছু বলা হয়না।
এবার কি বুঝতে পেরেছেন সত্যটা?
হোসাইন আহমাদ মাদানী মওদূদীর এই বক্তব্যের জন্য বলেছেন "এবার বলুন জামায়াতে ইসলামী ও এর প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা?" (মওদুদী দস্তর)
এ থেকে বুঝা যায় মওদূদীর জ্ঞানের পরিধি হোসাইন মাদানীর চেয়ে কত বেশী ছিল!
যারা এতদিন ভুলের মধ্য ছিলেন তারা কি সন্দেহমুক্ত হয়েছেন? নাকি জামায়াত ইসলামী তার একমাত্র অপরাধ? নাকি প্রাণের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে অনুসরণ করার চেষ্টায় তার ভূল?
নাকি অন্যান্য আলেমদের মত ইসলামের অর্ধেক মেনে অর্ধেক মেনে না নিয়ে
চলেন নি তাই তিনি বড় অপরাধী?
তথ্যসূত্রঃ সত্যের আলো, মাওলানা বশীরুজ্জান।
================
যে মাওলানা মওদুদীকে বলা হয় তিনি নাকি ইসমতে আম্বিয়া তথা নবীগণ আঃ মাসুম একথা মানেন না। তারা এক বড় ধরনের অপবাদ আরোপকারী। মওদুদীর মুখেই তাহলে শুনুন, তিনি নবীগণকে মাসুম মানেন কি না!!!
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি লিখেছেনঃ
"জামায়াতে ইসলামী সমগ্র বুযূর্গগণে দ্বীনকে সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের মহত্বের স্বীকৃতিকে জরুরী মনে করে। তবে নবীগণকে ছাড়া আর কাউকে মাসুম বা নিষ্পাপ মনে করে না।"
দেখুনঃ কিয়া জামায়াতে ইসলামী হক পর হ্যায়? পৃঃ ২৮৮
অতএব, একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মাওলানা মওদুদী রঃ নবীগণকে মাসুম বা নিষ্পাপ এই আকীদা রাখতেন।
================
তাফসীরে বায়যাবী খুলে দেখুন সূরা নসরের ব্যাখ্যা।
"সেখানে বলা হয়েছে অধিক ভাল ছেড়ে দেয়ার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করুন"
=================
তাফসীরে ফাতহুল কাদীর খুলে দেখুন সূরা নসরের ব্যাখ্যা।
"সেখানে বলা হয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার থেকে যে, "যাম্ব" বা গোনাহ প্রকাশ হয়েছে, এবং অধিক ভাল ছেড়ে দিয়েছেন"
=================
তাফসীরে আবী সাউদ খুলে দেখুন সূরা নসরের ব্যাখ্যা।
"সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষমা প্রার্থনা করুন অধিক ভালটা ছেড়ে দেয়ার কারণে"
=================
তাফসীরে আইসারুত তাফসীর খুলে দেখুন সূরা নসরের ব্যাখ্যা।
"সেখানেও বলা হয়েছে অধিক ভালটা ছেড়ে দেয়ার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করুন"
এতো উদাহরণ দেয়ার পরেও যার ভুল দূর হবে না, যে হটকারীতা করবে তার জন্য আমরা দু'আ করা ছাড়া আর কি বা করতে পারি!!!
প্রমাণসমূহঃ
মাশাআল্লাহ! অনেক চমৎকার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন।
আমীন, জাযাকাল্লাহু খাইর।