পোশাক পরিধানের সূন্নাত নিয়ম নীতি
মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
হে আদমের সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্হান ঢেকে রাখে এবং সুন্দর্যস্বরুপ। এবং খোদা ভীতির পোশাক, এটিই সর্বোত্তম।
[সূরা আল আরাফ, আয়াতঃ ২৬]
প্রথমে পোশাক পরিধানের কিছু মূলনীতি জেনে নিতে হবে মূলনীতি জানা থাকলে সহজেই বুঝে নেয়া যাবে যে, কোন ধরনের পোশাক পরিধান করা বৈধ। হাদীসের কিতাবগুলো গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে কিছু মূলনীতি জানা যায়। তা হচ্ছে,
১। পোশাকটি রেশমের তৈরী হতে পারবে না।
২। পায়ের টাখনুর নিচ পর্যন্ত পরিধান করা যাবে না।
৩। অহংকার যুক্ত পোশাক পরিধান করা যাবে না।
৪। অপব্যায় করা যাবে না
৫। পোশাকটি তাকওয়ার খেলাফ হতে পারবে না। (অর্থাৎ পোশাকটি পরিধান করলে যেন আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি হয়।)
৬। বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না। (অর্থাৎ ছেলে হয়ে মেয়ের পোশাক আর মেয়ে হয়ে ছেলের পোশাক পরিধান করা যাবে না।)
৭। অমুসলিমদের বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করা যাবে না। (যেমন, ধুতি পরিধান করা যাবে না)
৮। এক কালারের লাল রঙের পোশাক পরিধান করা যাবে না। (পুরুষের জন্য)
এবার চলুন দেখে নেয়া যাক পোশাক সম্পর্কে হাদীসগুলোঃ
পোশাকের ব্যাপারে অপচয় করা যাবে নাঃ
আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ), থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পানাহার করো, দান-খয়রাত করো এবং পরিধান করো যাবত না তার সাথে অপচয় বা অহংকার যুক্ত হয়।
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩৬০৫]
মানুষের সম্মান, তোষামোদ পাওয়ার উদ্দেশ্যে পোশাক পরিধান করা নিষেধঃ
ইবনু উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের মানসে পোশাক পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন।
[আবূ দাউদ ৪০২৯, আহমাদ ৫৬৩১]
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে যশ লাভের উদ্দেশ্যে পোশাক পরে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে অগ্নিসংযোগ করবেন।
[আবু দাউদ ৪০২৯, আহমাত ৫৬৩১]
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩৬০৫]
মানুষের সম্মান, তোষামোদ পাওয়ার উদ্দেশ্যে পোশাক পরিধান করা নিষেধঃ
ইবনু উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের মানসে পোশাক পরে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন।
[আবূ দাউদ ৪০২৯, আহমাদ ৫৬৩১]
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে যশ লাভের উদ্দেশ্যে পোশাক পরে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে অগ্নিসংযোগ করবেন।
[আবু দাউদ ৪০২৯, আহমাত ৫৬৩১]
পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক পরিধান করা হারামঃ
আবূ মূসা ‘আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে, আর মহিলাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।’’
[তিরমিযী ১৭২০, নাসায়ী ৫১৪৮]
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়াতে যে রেশমী কাপড় পরবে, আখেরাতে সে তা পরতে পাবে না।’’
[বুখারী ৫৮৩২, মুসলিম ২০৭৩, ইবনু মাজাহ ৩৫৮৮, আহমাদ ১১৫৭৪, ১৩৫৮০]
কাপড় পরিধানের দোয়াঃ
আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি কাসানি হাযাছ ছাওবা ওয়া রযাকানিহী, মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়্যাহ
নতুন কাপড় পরিধানের দোয়াঃ
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী কাসানী মা উওয়ারী বিহি আওরাতী ওয়াতাজাম্মালু বিহি ফী হায়াতী”
(সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এমন বস্ত্র পরিধান করিয়েছেন যা দিয়ে আমি আমার লজ্জাস্থান ঢাকতে পারি এবং আমার জীবনযাত্রাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে পারি)।
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩৫৫৭]
পায়ের টাখনুর উপর পোশাক পরিধান করা ওয়াজিব, যে ব্যক্তি তা ঝুলিয়ে পরে তার জন্য জাহান্নামঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’
[বুখারী ৫৭৮৮, মুসলিম ২০৮৭, আহমাদ ৮৭৭৮]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘লুঙ্গির যে পরিমাণটুকু পায়ের গাঁটের নীচে যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে।’
[বুখারী ৫৭৮৭, নাসায়ী ৫৩৩০]
ব্যাখ্যাঃ
বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বিভিন্ন ধরনের জামা পরিধান করতেন। তার কোনটির দৈর্ঘ্য ছিল টাখনু অবধি। কোনটি কিছুটা ছোট, যা হাটুর নিমভাগ পর্যন্ত ছিল। আবার কোনটির হাতা ছিল হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা। কোনটির হাতা কিছুটা ছোট, যা কব্জি পর্যন্ত ছিল।
পুরুষের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ)একটি বিশেষ দিক অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি পুরুষের পোশাকের নিচের অংশ পায়ের গোড়ালী থেকে উপরে রাখার আদেশ করেছেন এবং গোড়ালীর নিচে পাজামা, লুঙ্গি, জামা বা কোন পোশাক পরিধান করতে হারাম ঘোষণা করেছেন।
সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর লুঙ্গি ও জামা টাখনুর' উপরে থাকত। সাধারণত তিনি পোশাকের নিচের অংশ হাটু ও গোড়ালীর বরাবর বা নিসফে সাক’ পর্যন্ত পরিধান করতেন। বিভিন্ন হাদীসে তিনি মুসলিম উম্মাহর পুরুষগণকে এভাবে পোশাক পরিধান করতে আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং মুসলিম পুরুষের জন্য স্বেচ্ছায় টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পছন্দনীয় পোশাকঃ
উম্মে সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় পোশাক ছিল কামীস (জামা)।’
[আবূ দাউদ ৪০২৫, ৪০২৬, তিরমিযী ১৭৬২, ইবনু মাজাহ ৩৫৭৫]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা। [৫০]
ব্যাখ্যাঃ
সে সময়ে পোশাকের বিখ্যাত স্থান ইয়ামানের তৈরি ডোরা ও কারুকার্য সম্বলিত সূতী বা কাতান প্রকৃতির চাদরকে হিবারা বলা হতো। এগুলো কখনো লাল, কখনো নীল, আবার কখনো সবুজ ডোরাকাটা হতো।
সবুজ রঙের পোশাক পরিধান করাঃ
আবূ রিমসা রিফাআহ তাইমী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরনে দুটো সবুজ রঙের কাপড় দেখেছি।’
[আবূ দাউদ ৪০৬৫, ৪২০৬, তিরমিযী ২৮১২, ১৫৭২, আহমাদ ৭০৭১]
লাল রঙের পোশাক পরিধান করাঃ
বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম আকৃতির লম্বা ছিলেন। আমি তাঁকে লাল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আমি তাঁর চাইতে অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি।’
[বুখারী ৩৫৪৯, ৩৫৫১, ৩৫৫২, ৫৮৪৮, ৫৯০১, মুসলিম ২৩৩৭, তিরমিযী ১৭২৪]
ব্যাখ্যাঃ
উক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ লাল এক কালারের জামা পরেননি বরং লাল রঙের উপর ডোরাকাটা ছিল। শুধু লাল রঙের পোশাক পরিধান করা পুরুষদের জন্য মাকরুহ।
কালো রঙের পোশাক পরিধান করাঃ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তার দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল।
[সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৬৬, আবু দাউদ, হা/৪০৩৪]
সাদা রঙের পোশাক পরিধান করা উত্তমঃ
সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান কর। কেননা, তা সবচেয়ে পবিত্র ও উৎকৃষ্ট। আর ওতেই তোমাদের মৃতদেরকে কাফন দাও।’’
[সহীহ তারগীব ২০২৭]
জামার বোতাম খোলা রাখাঃ
কুররাহ বিন ইয়াস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁর হাতে বাইআত হলাম। তাঁর জামার বোতামগুলো খোলা ছিল। রাবী উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, তাই আমি শীতকালে বা গ্রীষ্মকালে মুআবিয়া ও তার ছেলের জামার বোতাম খোলা রাখতে দেখেছি।
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩৫৭৮]
হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করা নিষেধঃ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘মুফাদ্দাম’ পরতে নিষেধ করেছেন। রাবী ইয়াযিদ (রাঃ) বলেন, আমি হাসান বিন সুহায়লকে জিজ্ঞেস করলাম ‘মুফাদ্দাম’ কী? তিনি বলেন, হলুদ রং-এ রঞ্জিত বস্ত্র।
[ইবনে মাজাহ, হাঃ ৩৬০১]
মুগীরা ইবনে শু’বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সঃ) আটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুব্বা পরিধান করেন।
[মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৬৫]
ব্যাখ্যাঃ
রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন যে পোশাক পেয়েছেন তাই ব্যবহার করেছেন। তিনি সুতি, পশমী ও কাতানের তৈরি প্রভৃতি পোশাক ব্যবহার করেছেন। সবুজ, লাল, হলুদ, সাদা, কালো ও মিশ্রিত যখন যে রংয়ের পোশাক পেয়েছেন পরিধান করেছেন। কারণ আরবে কোন পোশাক তৈরি হতো না। এগুলো মক্কা-মদিনার বাইরে সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি দেশে তৈরি হতো। তাই ব্যবসায়ীগণ যে পোশাক আনতেন তাই সাধ্যমতো ক্রয় করে বা উপহার হিসেবে যা পেতেন তাই ব্যবহার করতেন ।