আলেমদের মাঝে মতবিরোধ, আমরা সাধারণ মানুষ যাবো কোথায়?
‘হুজুর! আমরা জেনারেল শিক্ষিত মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ। এখানে একদিকে আপনারা দেওবন্দী। অপরদিকে আহলে হাদীস। আবার আছে বেরেলবী বা তাদের মতানুসারী।
এই তিন দলের বক্তব্য তিন ধরণের। সবাই নিজেদের হক দাবী করে। অন্য দলকে ভ্রান্ত বলে। সবাই বড় বড় আলেম। এমতাবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষ যাবো কোথায়?’
আমি বলি: আপনি মধ্যপন্থী উম্মত হয়ে যান।
মানে? বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞাসা।
বলি: আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য বলেছেন যে, তারা হবে উম্মতে ওয়াসাতাহ। তথা মধ্যপন্থী উম্মত। [সূরা বাকারা-১৪৩] এরা মাঝামাঝি থাকবে। বাড়াবাড়িও করবে না, আবার ছাড়াছাড়িও করবে না।
তাই দেশের তিন দলের এ মতভেদের মাঝেও আপনি মধ্যপন্থী মতটি বেছে নিন।
যেহেতু তিন দলেই উলামা আছে। বিজ্ঞ আলেম আছে বলে মনে করেন। তখন মধ্যপন্থী মত বের করা খুবই সহজ। যেহেতু ডাক্তারদের মাঝে মতভেদ হলে বেশি সংখ্যক ডাক্তারের কথাই গ্রহণযোগ্য হওয়া যৌক্তিক। ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে মতভেদ হলে বেশি সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ারের মত গ্রহণ করাই যৌক্তিক।
তেমনি উলামাদের মাঝে মতভেদ হলে বেশি সংখ্যক উলামা যে পক্ষে তা মেনে নেয়াই যৌক্তিক।
তবে উলামা ও আওয়ামের মাঝে মতভেদ হলে সংখ্যা নয়, বরং যেদিকে উলামা সে মত গ্রহণ করাই যৌক্তিক। যেমন রোগি ও ডাক্তারে মতভেদ হলে হাজারো রোগির কথা নয়, বরং ডাক্তারের কথা গ্রহণ হয়। এ সহজ কথা বুঝলে উম্মাতে ওয়াসিতাহ বা মধ্যপন্থী উম্মত বের করা খুবই সহজ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে।
১। মুজতাহিদের মাযহাব অনুসরণ ও বর্জন
মাযহাব মানাটা মধ্যপন্থী। কারণ, একদিকে আহলে হাদীস অস্বিকারকারী আর মান্যকারী দুই দল তথা দেওবন্দী ও বেরেলবী।
২। প্রচলিত মিলাদ কিয়াম
এখানে মধ্যপন্থী হলো প্রচলিত মিলাদ কিয়াম বর্জন। কারণ, এটা পালনকারী কেবল বেরেলবী ও তার সহযোগীরা, কিন্তু অস্বিকারকারী দেওবন্দী ও আহলে হাদীস।
৩। আমীন জোরে আস্তে বলার মাসআলা
জোরে বলার স্বপক্ষে আহলে হাদীস ও বিপক্ষে দেওবন্দী ও বেরেলবীরা।
সুতরাং মধ্যপন্থী মত এখানেও আমীন আস্তে বলা।
৪। ইয়া নবী সালামু আলাইকা নামে দরূদ
পক্ষে বেরেলবী কেবল, বিপক্ষে দেওবন্দী ও আহলে হাদীস।
সুতরাং এখানেও মধ্যপন্থী মত এটা দরূদ হওয়াকে অস্বিকার করা।
৫। নামাযের রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন
পক্ষে কেবল আহলে হাদীস। বিপক্ষে দেওবন্দী ও বেরেলবী।
এর মানে এখানে মধ্যপন্থী মত রফউল ইয়াদাইন না করা।
৬। নবীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করা
পক্ষে কেবল বেরেলবীরা। কিন্তু বিপক্ষে দেওবন্দী ও আহলে হাদীসরা।
এর মানে এখানেও মধ্যপন্থী মত হাজির নাজিরের শিরকী আকীদা বর্জন।
এভাবে কিরাত খালফাল ইমাম, কবরে সেজদা, তারাবী নামায, তা’জীমী সেজদা, বিতর নামায, মীলাদুন্নবী উদযাপন, নামাযে হাত বাঁধা ইত্যাদি সকল ইখতিলাফী মাসআলায় ইনশাআল্লাহ এ উপমহাদেশের ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হানাফী দেওবন্দী’ গণকেই পাবেন মধ্যপন্থী।
কারণ, তারা কখনোই একাকী হন না। তাদের সাথে হয়তো বেরেলবীরা একমত হয়, নতুবা আহলে হাদীসরা একমত হয়।
আপনি যদি কুরআনে নির্দেশিত উম্মতে ওয়াসাতাহ এ বাংলাদেশে হতে চান! তাহলে জেনারেল শিক্ষিতদের জন্য এর চেয়ে সহজ মূলনীতি আর কী হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উম্মাতে ওয়াসাতাহ হিসেবে কবুল করুন। আমীন।