অকাল মৃত্যু বলতে কিছু নেই, এটি একটি কুফরী কথা!
এধরণের আরো কিছু কথা আছে যেমন, যদি সে গাড়ীতে না উঠতো তাহলে মারা যেতো না, যদি কয়েক মিনিট আগে হাসপাতালে পৌঁছিতো তাহলে মারা যেতো না, যদি নৌকায় না উঠতো তাহলে পানিতে ডুবতো না, যদি এটা করতো তাহলে সেটা হতো না ইত্যাদি যতরকম কথা আছে সবগুলোই কুফরী কথা! এধরণের কথাবার্তা থেকে মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
এখন আপনাদের নিকট পরিষ্কার করে দেবো যে, অকাল মৃত্যু বলতে কিছু নেই।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেনঃ
কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে।
{সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৪৫}
হে ঈমানদারগণ! কাফেরদের মতো কথা বলো না। তাদের আত্মীয়স্বজনরা কখনো সফরে গেলে অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে (এবং সেখানে কোন দুর্ঘটনায় পতিত হলে) তারা বলে, যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে মারা যেতোনা এবং নিহত হতো না। এ ধরনের কথাকে আল্লাহ তাদের মানসিক খেদ ও আক্ষেপের কারণে পরিণত করেন। (তাদের কথা সঠিক নয় বরং, ) জীবন–মৃত্যু তো একমাত্র আল্লাহই দান করে থাকেন এবং তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপের ওপর তিনি দৃষ্টি রাখেন।
{সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৬}
এরা নিজেরা বসে থাকলো এবং এদের ভাই –বন্ধু যারা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে বলেছিলঃ যদি তারা আমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে মারা যেতো না। ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেদের একথায় যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের নিজেদের মৃত্যু যখন আসবে তখন তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে দেখাও।
{সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৬৮}
আর মৃত্যু, সে তোমরা যেখানেই থাকো না কেন সেখানে তোমাদের নাগাল পাবেই, তোমরা কোন মজবুত প্রাসাদে অবস্থান করলেও।
{সূরা নিসা, আয়াতঃ ৭৮}
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
{সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ৩৫}
প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে
{সূরা আনকাবুত, আয়াতঃ ৫৭}
একমাত্র আল্লাহই সেই সময়ের জ্ঞান রাখেন। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি লালিত হচ্ছে। কোন প্রাণসত্তা জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন ব্যক্তির জানা নেই তার মৃত্যু হবে কোন যমীনে। আল্লাহই সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন।
{সূরা লোকমান, আয়াতঃ ৩৪}
প্রত্যেক জাতির জন্য অবকাশের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। তারপর যখন কোন জাতির সময় পূর্ণ হয়ে যাবে তখন এক মুহূর্তকালের জন্যও তাকে বিলম্বিত বা ত্বরান্বিত করা হবে না।
{সূরা আরাফ, আয়াতঃ ৩৪}
হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর ঘোষণাঃ
১. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রতিপালক! এটি বীর্য। হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিণ্ড। হে প্রতিপালক! এটি গোশ্তপিণ্ড। আল্লাহ্ যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হবে, না ভাগ্যবান? তার রিযক কী পরিমাণ হবে? তার জীবনকাল কী হবে? তখন (আল্লাহ্র নির্দেশমত) তার মায়ের পেটে থাকাকালে ঐ রকমই লিখে দেয়া হয়।
{বুখারী শরীফ, হাঃ ৬১৪৩}
২. আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা সকল মাখলুকের তাকদীর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সে সময় আল্লাহর ‘আরশ পানির উপরে ছিল।
{মুসলিম শরীফ, হাঃ ৬৫০৭}
৩. মাতার ইবনু উকামিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যখন যে জায়গায় কারো মৃত্যু হওয়ার ফায়সালা করেন, তখন ঐ জায়াগায় গমনের উদ্দেশ্যে তার কোন প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।
{তিরমিযী শরীফ, হাঃ ২১৪৬}
মোটকথা, উক্ত বিষয়ে পবিত্র কোরআন এবং হাদীসে অসংখ্য জায়গায় বলা হয়েছে। যার সারমর্ম হচ্ছে, অকাল মৃত্যু বলতে কিছুই নেই। প্রত্যেকের মৃত্যুর জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে তাই যখনই সে মারা যাবে সেটাই হচ্ছে তার নির্ধারিত সময়। এই মৃত্যু হওয়া থেকে কেউ এক সেকেন্ড আগ পিছ করতে পারবে না। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন
ঈমানের গুরুত্ব ও ফজিলত