জুমআর দিনের ফজিলত

জুমআর দিনের ফজিলত


জুমআর দিনের আমলঃ


সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে, জুমআর দিন। এইদিন প্রত্যেকটি মসজিদে মুসলিমদের মিলনমেলা বসে। সবাই পাক পবিত্র জামা কাপড় পরিধান করে আতর সুরমা লাগিয়ে, অনেকে কাঁধে জায়নামাজ নিয়ে মসজিদ নামাক জান্নাতের বাগানে প্রবেশ করে। এযে কি অনাবিল এক প্রশান্তি তা কাউকে বুঝানো যাবে না।

ধনী গরীব কোন ভেদাভেদ নেই। সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার বন্দী হয়ে বসে ইমাম সাহেবের নসিহত শ্রবণ করে। কারো মনে কোন প্রকার অহংকারের উদ্রেগ হয় না। অফিসার, ম্যানেজার, কর্মচারী সবাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। কি এক পবিত্র দিন সুবহানাল্লাহ!

এই পবিত্র দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআন এবং হাদীস থেকে এই দিনের কিছু ফজিলত আলোচনা করছি।

সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে, জুমআর দিনঃ


আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমআর দিন । এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে বেহেশ্‌তে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে বেহেশ্‌ত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ।”

{মুসলিম ৮৫৪, তিরমিযী ৪৮৮, ৪৯১, নাসায়ী ১৩৭৩, ১৪৩০, আহমাদ ৭৬৩০}

জুমআর নামায দ্বারা পাপ মোচন হয়ঃ


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ সম্পাদন ক’রে জুমআর নামায পড়তে আসবে এবং নীরবে মনোযোগসহকারে (খুতবা) শুনবে, তার সেই জুমআহ হতে পরবর্তী জুমআর মধ্যবর্তী সময় তথা আরও তিন দিনের (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র) পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে । আর যে ব্যক্তি কাঁকর স্পর্শ করবে, সে বাজে কাজ করবে ।”

{মুসলিম ৮৫৭, তিরমিযী ৪৯৮, আবূ দাঊদ ১০৫০, ইবনু মাজাহ ১০৯০, আহমাদ ৯২০০}

জুমআর নামাযের জন্য গোসল করাঃ


ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন জুমআতে আসার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন গোসল করে ।”

{সহীহ বুখারী ৯১৯, ৮৭৭, ৮৯৪, তিরমিযী ৪৯৩, নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫, ১৪০৭, ইবনু মাজাহ ১০৮৮, আহমাদ ৩০৫০}

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “প্রত্যেক সাবালকের উপর জুমআর দিনের গোসল ওয়াজেব ।”

{সহীহ বুখারী ৯১৯, ৮৭৭, ৮৯৪, তিরমিযী ৪৯৩, নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫, ১৪০৭, ইবনু মাজাহ ১০৮৮}

জুমআর দিন গোসল করা ওয়াজিব নয় বরং সর্বোত্তম কাজঃ


সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিনে ওযূ করল তাহলে তা যথেষ্ট ও উত্তম । আর যে গোসল করল, (তার) গোসল হল সর্বোত্তম ।”

{তিরমিযী ৪৯৭, আবূ দাঊদ ৩৫৪, নাসায়ী ১৩৮০, আহমাদ ১৯৫৮৫, ১৯৬১২}

জুমআর দিন দোয়া কবুলের জন্য একটি বিশেষ সময় আছেঃ


আবূ হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা জুমআর দিন সম্বন্ধে আলোচনা ক’রে বললেন, “ওতে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামায অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দান ক’রে থাকেন ।” এ কথা বলে তিনি স্বীয় হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত ।

{সহীহ বুখারী ৯৩৫, ৫২৯৫, ৬৪০০, মুসলিম ৮৫২, তিরমিযী ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-১৪৩২, আবূ দাঊদ ১০৪৬, ইবনু মাজাহ ১১৩৭}

আবূ বুর্দাহ ইবনে আবূ মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি জুমআর দিনের বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে আপনার পিতাকে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করতে শুনেছেন ?’ তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হ্যাঁ । আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “সেই মুহূর্তটুকু ইমামের মেম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিতরে ।”

{মুসলিম ৮৫৩, আবূ দাঊদ ১০৪৯}

জুমআর দিন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর দরুদ পাঠঃ


আওস ইবনে আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমআর দিন । সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর । কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয় ।”

{আবূ দাঊদ ১০৪৭, ১৫৩১, নাসায়ী ১৩৭৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৬}

পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলতঃ


আবায়া ইব্‌নু রিফা‘আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুমু‘আর সালাতে যাবার কালে আবূ আবস (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, যার দু’পা আল্লাহ্‌র পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।

{বুখারী, হাঃ ৯০৭}

মসজিদে এসে একজনের যায়গায় অন্যজন না বসাঃ


ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইব্‌নু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু’আ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।

{বুখারী, হাঃ ৯১১}

জুমআর নামাযের পরে হালকা বিশ্রাম করাঃ


সাহ্‌ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু’আর সালাত আদায় করতাম। অতঃপর দুপুরের বিশ্রাম ও হালকা নিদ্রা যেতাম।

{বুখারী, হাঃ ৯৪১}

জুমআর দিন সুগন্ধি ব্যবহার করাঃ


সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুত্‌বার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমু‘আ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

{বুখারী, হাঃ ৯১০}

খুতবার সময় কথা বলা নিষেধঃ


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্‌বা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।
{বুখারী, হাঃ ৯৩৪}

চুপ করে খুতবা শোনার ফজিলতঃ


আওস ইব্‌ন আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাথা এবং শরীর ধুয়ে উত্তম রূপে গোসল করে এবং জুমু’আর সময়ের প্রথম সময়েই মসজিদে যায় এবং খুতবা শুরু থেকেই শুনতে পায় ও ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে এবং কোন অনর্থক কাজ না করে (কথা না বলে), তার জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ এক বছর আমল করার সওয়াব হবে অর্থাৎ এক বছর সিয়াম পালন করা এবং সালাত আদায় করার।

{নাসাঈ শরীফ, হাঃ ১৩৮১}

জুমআর দিন পরে এসে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধঃ


আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুক্রবারে তাঁর পাশে বসা ছিলাম, তারপর তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে আসছিল, রাসূ্লুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, বসে পড়, তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ।

{নাসাঈ শরীফ, হাঃ ১৩৯৯}

জুমআর নামায পরিত্যাগ করলে অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হবেঃ


‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন : যারা জুমু‘আর সলাত ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

{মুসলিম, হাঃ ১৮৭২}

আবুল জা’দ যামরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী ছিলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি জুমু’আ তার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন পূর্বক ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।

{নাসাঈ শরীফ, হাঃ ১৩৬৯}

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
No Comment
Add Comment
comment url